ধর্মমতে একজন মানুষের দৈনিক কার্যাবলী

হিন্দু ধর্মে দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু আচার-অনুষ্ঠান ও নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হয়। এসব কার্যাবলী ব্যক্তিগত ভক্তি, পারিবারিক সংস্কৃতি এবং সামাজিক রীতিনীতির ওপর নির্ভর করে। একজন সনাতন(হিন্দুধর্মনুরাগী) ধর্মাবলম্বীর/ধর্মাবলম্বিনীর দৈনিক কার্যাবলী নিম্নের ধাধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলোঃ

একজন সনাতনী নরনারীর দৈনিক সাধারণ কার্যাবলীঃ

১."ওঁ তৎ সৎ”/ হরে কৃষ্ণ বা নিজ ইষ্টদেবতার নাম দিয়ে শুরু করা উচিত হিন্দু ধর্মীয় সকল কাজ শুরুর আগে। 
২."ওঁ প্রিয়দত্তায়ৈ ভূম্যৈ নম:" বলুন সকালে ঘুম থেকে উঠে পূর্বমুখী হয়ে মাটি স্পর্শ করে। 
৩.ঘরের দরজা খুলে পূর্বমুখী হয়ে সূর্য প্রণাম মন্ত্র: ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ। 
৪. স্নান করার সময় বলুন- ওঁ গঙ্গে চ যমুনা চৈব গোদাবরি সরস্বতী নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু। পরে- ওঁ কুরুক্ষেত্র গয়া গঙ্গা প্রভাস পুষ্করিণী চ তীর্থান্যেতানি পুণ্যানি স্নানকালে ভবন্ত্বিহ।
৫.গৃহ প্রবেশ মন্ত্র- ওঁ শ্রী বাস্তুপুরুষায় নমঃ।
৬ খাবার আগে- ওঁ শ্রী জনার্দ্দনায় নম:
৭. ঘুমাবার আগে- ওঁ শ্রী পদ্মনাভায় নমঃ।
৮.বিপদে পড়িলে - ওঁ শ্রী মধুসূদনায় নমঃ।
৯.মলমূত্র ত্যাগের আগে- আজ্ঞা কুরু বসুন্ধরা।
১০.মৃত্যু সংবাদ শুনলে-দিব্যান্ লোকান্ স গচ্ছতু।
১১.জন্ম সংবাদ শুনলে- আয়ুষ্মান ভব।
সনাতন ধর্মাবলম্বীকে তাঁর সকল কাজ শুরুর আগে ''ওঁ তৎ সৎ'' উচ্চারণ করে শুরু করা উচিত। কৃষ্ণ" নাম স্মরণ করে ও এই কাজগুলো করতে পারেন। 
 
ধর্মমতে একজন মানুষের দৈনিক কার্যাবলী hd
ধর্মমতে একজন মানুষের দৈনিক কার্যাবলী 

একজন হিন্দুর দৈনিক ধর্মীয় কার্যাবলীঃ

প্রতিদিন ধর্মীয় বিধান বা নিয়ম মেনে কিছু কর্ম করতে হয় এ সব কর্মকেই নিত্যকর্ম বলা হয়।
নিত্যকর্ম ছয় প্রকার হয়ে থাকে। যথা-
১। প্রাতঃকৃত্য,
২। মধ্যাহ্নকৃত্য,
৩। পূর্বাহ্ণকৃত্য,
৪। অপরাহ্ণকৃত্য,
৫। সায়াহ্নকৃত্য এবং
৬। রাত্রিকৃত্য।  

এই ছয়টি কর্মের মধ্যে তিনটি কর্ম অতীব গুরুত্বপূর্ণ তাই সংক্ষেপে নিচে তিনটি নিত্যকর্মের বর্ণনা দেওয়া হলোঃ  

১. প্রাতঃকৃত্য : প্রাতঃকৃত্য নিত্যকর্মের সূর্যোদয়ের কিছু আগে ঘুম থেকে উঠতে হয়। তারপর বিছানায় বসে উত্তর বা পূর্বমুখী হয়ে দেব-দেবী বা ঈশ্বরকে স্মরণ করে মন্ত্রপাঠ করতে হয়।  

২. পূর্বাহ্ণকৃত্য : প্রাতঃকৃত্য শেষ করার পরে এবং মধ্যাহ্ন বা দুপুরের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে যেসব কাজ করা হয় তাই হলো পূর্বাহ্ণকৃত্য। এ সময় পূজা ও প্রার্থনা করে দিনের অন্যান্য কাজ-কর্ম করতে হয়।  

৩. মধ্যাহ্নকৃত্য : দুপুরের কাজ, খাওয়া ও বিশ্রাম এই কাজ গুলোকেই মধ্যাহ্নকৃত্য বলা হয়।

NB:উপরোক্ত নিয়মগুলো যদি পালন করতে সমস্যা হয় বা আপনার সময় না হয় তবে নিচের নিয়ম গুলো অনুসরণ করতে পারেন

হিন্দু ধর্মে দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু আচার-অনুষ্ঠান ও নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা হয়। এসব কার্যাবলী ব্যক্তিগত ভক্তি, পারিবারিক সংস্কৃতি এবং সামাজিক রীতিনীতির ওপর নির্ভর করে। নিচে একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীর সাধারণ দৈনিক কার্যাবলী সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:  
একজন হিন্দুর দৈনিক ধর্মীয় কার্যাবলী কি?

### **সকালবেলা:**  
1. **স্নান ও শুদ্ধি:** ভোরে উঠে গঙ্গাজল বা বিশুদ্ধ পানির মাধ্যমে স্নান করে আত্মশুদ্ধি করা হয়।  
2. **সন্ধ্যা (সংধ্যা বন্দন):** সূর্যোদয়ের সময় গায়ত্রী মন্ত্র ও অন্যান্য স্তোত্র পাঠ করা হয়।  
3. **পূজা ও উপাসনা:** ইষ্টদেবতা বা কুলদেবতার পূজা করা হয়, ধূপ-দীপ জ্বালানো হয় এবং মন্ত্র জপ করা হয়।  
4. **তুলসী পূজা:** অনেক হিন্দু পরিবারে তুলসী গাছের পূজা করা হয় এবং প্রদক্ষিণ করা হয়।  
5. **প্রসাদ গ্রহণ:** পূজার পর দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত প্রসাদ গ্রহণ করা হয়।  

### **দুপুরবেলা:**  
1. **ভোজন পূর্ব মন্ত্র:** খাওয়ার আগে ‘অন্নপূর্ণা স্তোত্র’ বা অন্যান্য মন্ত্র পাঠ করা হয়।  
2. **দান ও সেবা:** অসহায় বা ব্রাহ্মণদের দান করা ধর্মীয় কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়।  

### **বিকেলবেলা:**  
1. **গো-সেবা:** অনেক হিন্দু গো-সেবা করে থাকেন।  
2. **ধর্মীয় আলোচনা ও পাঠ:** গীতা, রামায়ণ, মহাভারত বা অন্য ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা হয়।  
3. **সন্ধ্যা পূজা:** সন্ধ্যা সময় প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি ও স্তোত্র পাঠ করা হয়।  

### **রাতের সময়:**  
1. **ভগবানের নাম স্মরণ:** শয্যা গ্রহণের আগে ভগবানের নাম জপ করা হয়।  
2. **ধর্মীয় কাহিনী শোনা বা বলা:** অনেক পরিবারে শিশুদের ধর্মীয় কাহিনী বলা হয়।  
3. **নিদ্রার আগে প্রার্থনা:** ‘শান্তি মন্ত্র’ বা অন্যান্য মন্ত্র উচ্চারণ করে শয্যা গ্রহণ করা হয়।  

এছাড়া, উপবাস, কীর্তন, যজ্ঞ ও ভক্তিমূলক কার্যক্রম নির্দিষ্ট দিনে পালন করা হয়। এগুলো আচার ও রীতিনীতির ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।

এই কার্যগুলো মাত্র একদিন করুন তারপর দেখতে পারবেন দিনশেষে আপনি মনে মনে কতটা প্রশান্তি অনুভব করছেন। আমরা পৃথিবীতে কত দিন বাঁচব, এই পৃথিবীটা আমাদের স্বপ্নের মত স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে আমরা আর এই দুনিয়ায়  থাকবো না তাই যে কয়দিন বেঁচে থাকি ধর্মীয় মতে দিনগুলো পার করার চেষ্টা করি।

Comments