মহামায়া হলো দেবী দুর্গার রূপ
ধর্মীয় অর্থে – হিন্দু দর্শনে মহামায়া হলেন দেবী দুর্গার এক রূপ, যিনি ব্রহ্মাণ্ডের শক্তির আধার।
মহামায়া এমনি একটি শব্দ যা সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক।হিন্দু দর্শনে বর্ণিত পরমেশ্বরী শক্তি হলো মহামায়া।
মহামায়া এমনি একটি শব্দ যা সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক।হিন্দু দর্শনে বর্ণিত পরমেশ্বরী শক্তি হলো মহামায়া।
মহামায়া শব্দের অর্থ কি?
দেবী দুর্গার মহামায়া রূপ হল তার সর্বশক্তিময়ী, মহাশক্তির প্রকাশ। "মহামায়া" শব্দের অর্থ হলো "মহান মায়া" বা "ঐশ্বরিক বিভ্রমের অধিষ্ঠাত্রী", যা সমগ্র সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের নিয়ন্ত্রক। এই রূপে তিনি অসুরদের পরাস্ত করেন, ভক্তদের রক্ষা করেন এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকল শক্তির আধার হিসেবে বিরাজ করেন।
![]() |
মহামায়া হলো দেবী দুর্গার রূপ |
নাগোজীভট্টী টীকা অনুসারে জানা যায়।মহামায়া'বিসদৃশ-প্রতীতি-সাধিকা ঈশ্বরশক্তি'। আবার তত্ত্বপ্রকাশিকা টীকা অনুযায়ী মহামায়াই হল “অঘটন-ঘটন-পটীয়সী ব্রহ্মাত্মিকা শক্তি”। হিন্দুদের বিশ্বাস ঈশ্বর সৃষ্টি, পালন, সংহার ও জন্ম লীলা প্রভৃতি কার্য এই মহাশক্তির সাহায্যেই সম্পাদন করেন।আর এই মহাশক্তিই দূর্গা,কালী,জগদ্ধাত্রী ইত্যাদি নামে ও রূপে ভক্তদের দ্বারা পূজিতা হয়ে থাকে।
ব্রহ্মা নারদকে মহামায়া তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন দেবী ভাগবত গ্রন্থে।দেবী ভাগবত গ্রন্থে মহামায়া ব্রহ্ম, পরমাত্মা ও ভগবতী নামে আখ্যা দেয়া হয়েছে। রুদ্রযামল তন্ত্রগ্রন্থেও মহামায়াকে পরব্রহ্ম বলা হয়েছে।
শ্রী চণ্ডীতে রাজা সুরথ ঋষির নিকট মহামায়া তত্ত্বব্যাখ্যা জানতে চাইলে সমগ্র চণ্ডীপুস্তকটির কাহিনির অবতারণা করা হয়। এই গ্রন্থে সর্বমোট ৮বার মহামায়ার উল্লেখ করেছিলো। মহামায়ার হাতের অস্ত্র অনেকেই স্পষ্ট ধারনা নেই। মহামায়া হলো দেবী দুর্গার রূপ
ত্রিশূল :স্বয়ং মহাদেব মহামায়ার হাতে ত্রিশূল তুলে দিয়েছিলেন ৷আপনি জানেন কি? ত্রিশূলের যে তিনটি ফলা রয়েছে তাদের আলাদা আলাদা অর্থ রয়েছে।এই তিনটি ফলা মানুষের তিনটি গুণ, তমঃ, রজঃ ও সত্যকে ব্যাখ্যা করে৷
গদা:কালদণ্ড বা গদা দিয়েছিলেন স্বয়ং যমরাজ৷গদা হলো আনুগত্য, ভালবাসা এবং ভক্তির প্রতীক।
বজ্রাস্ত্র: বজ্রাস্ত্র দিয়েছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র।মহামায়ার হাতের এই অস্ত্র দৃঢ়তা এবং সংহতির প্রতীক।
সাপ: নাগহার দিয়েছিলেন শেষ নাগ আর এই সাপ হলো বিশুদ্ধ চেতনার প্রতীক।
অগ্নি: অগ্নি অস্ত্র দিয়েছিলেন স্বয়ং অগ্নিদেব যা জ্ঞান এবং বিদ্যার প্রতীক।
শঙ্খ: শঙ্খ দিয়েছিলেন বরুণ।আার এই শঙ্খ জীব জগতে প্রাণের সৃষ্টি করে।
চক্র: বিষ্ণু তুলে দিয়েছিলেন মায়ের হাতে চক্র যার অর্থ হল সমস্ত সৃষ্টি ও জগতের কেন্দ্রে অধিষ্ঠান রয়েছেন মহামায়া।
তীর-ধনুক: ধনুক ও তীর দিয়েছিলেন স্বয়ং বায়ু।ধনুক ও তীর উভয়ই ইতিবাচক শক্তির প্রতিক৷
পদ্ম:পদ্ম দেবীর হাতে তুলে দেন ব্রহ্মা৷যদিও পদ্ম পাঁকে জন্মায় তবু সে কত সুন্দর। তেমনই মমহামায়ার আশীর্বাদে যেন অন্ধকারের মধ্যেও আলোর আবির্ভাব হয় সেই বার্তাই দেয় পদ্ম ফুল।
তলোয়ার: আর তলোয়ার হল মানুষের বুদ্ধির প্রতীক৷তরোয়ারের জোরে সমস্ত বৈষম্য ও অন্ধকারকে ভেদ করতে পারে মানুষ৷
(সিংহ নয়, পুরাণ মতে মা দুর্গার বাহন এরাই)
মহামায়া আমাদের পরম আরাধ্যা জগৎ জননী-সকল দুঃখ বিনাশীনি দশভুজা দুর্গেশনন্দিনী।
অর্থাৎ মহামায়া হল হিন্দু দর্শনে বর্ণিত পরমেশ্বরী শক্তি। নাগোজীভট্টী টীকা অনুসারে মহামায়া “বিসদৃশ-প্রতীতি-সাধিকা ঈশ্বরশক্তি”। তত্ত্বপ্রকাশিকা টীকা মতে মহামায়াই হল “অঘটন-ঘটন-পটীয়সী ব্রহ্মাত্মিকা শক্তি”। ঈশ্বর সৃষ্টি, পালন, সংহার ও জন্ম লীলা প্রভৃতি কার্য এই মহাশক্তির সাহায্যেই সম্পাদন করেন বলে হিন্দুদের বিশ্বাস। এই মহাশক্তিই দুর্গা, কালী, জগদ্ধাত্রী প্রভৃতি নামে ও রূপে ভক্তদের দ্বারা পূজিতা হন।ইনি শিব কে স্বামী রূপে গ্রহণ করেন।
মহামায়া দুঃখ কন্যা সতী ও হিমালয়ের কন্যা রূপে জন্ম নেন পার্বতী নামে। মহামায়া তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন দেবী ভাগবত গ্রন্থে ব্রহ্মা স্বয়ং জানিয়েছিলেন নারদকে। ব্রহ্ম পরমাত্মা ও ভগবতী নামে পরিচিত মহামায়া ভগবত গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায়।৷ মহামায়াকে পরব্রহ্ম বলা হয়েছে রুদ্রযামল তন্ত্রগ্রন্থেও । শ্রীশ্রীচণ্ডীতে রাজা সুরথ মেধা ঋষির নিকট মহামায়া তত্ত্বব্যাখ্যা জানতে চাইলে সমগ্র চণ্ডীপুস্তকটির কাহিনির অবতারণা করা হয়। এই গ্রন্থে মোট আটবার মহামায়ার উল্লেখ করা হয়েছে। বৈষ্ণবগণ মহামায়াকে ভগবান বিষ্ণুর বহিরঙ্গা শক্তি বলেন।
মহামায়া রূপের বৈশিষ্ট্য:
১. অধিষ্ঠাত্রী শক্তি: মহামায়া হলেন প্রকৃতির চরম রূপ, যিনি সমগ্র সৃষ্টি ও ধ্বংসের নিয়ন্ত্রণ করেন।
2. বিজয়িনী: অসুর মহিষাসুরকে বধ করার সময় দেবী দুর্গার মহামায়া রূপ বিশেষভাবে প্রকাশিত হয়।
3. মোহিনী শক্তি: তিনি অসুরদের মায়ার জালে আবদ্ধ করে তাদের বিনাশ করেন।
4. ত্রিগুণাত্মিকা: মহামায়া রূপে তিনি সত্ত্ব, রজ ও তম—এই তিনটি গুণের অধিষ্ঠাত্রী।
শাস্ত্রীয় উক্তি: দেবী মহাত্ম্যে উল্লেখ আছে— "মহামায়া হরে বিশ্বং, ব্রহ্মাদিদৈবতৈঃ সহ।" অর্থাৎ, মহামায়া স্বয়ং বিশ্বকে ধারণ ও পরিচালনা করেন। পূজা ও গুরুত্ব: দেবী দুর্গার মহামায়া রূপে পূজা করলে শত্রু বিনাশ হয়, জীবনে বাধা দূর হয় এবং ভক্তের মধ্যে জ্ঞানের আলো বিকশিত হয়। শাক্ত মতে, মহামায়ার আরাধনা মুক্তির পথকে সুগম করে।
Comments
Post a Comment