গীতার বাণী পড়ুন; জীবনকে বদলে দিতে পারে

গীতা সর্বমোট  সাতশো শ্লোকের একটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ৷গীতাকে অনেকে প্রাচীন সংস্কৃত মহাকাব্যের একটি অংশ হিসেবে মানেন৷গীতা হলো ভগবানের মুখনি:সৃত বাণী৷ শ্রী কৃষ্ণের মুখ থেকেই এই গীতায় বাণী নি:সৃত হয়েছে ফলে গীতার বাণী একটি ঐশ্বরিক বাণী হিসেবে বিবেচিত হয়৷ কুরুক্ষেত্রে অর্জুনকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল শ্রী কৃষ্ণ৷ আর সেই ভগবানের মুখনি:সৃত বাণীই আজও মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করে চলেছে সমাজের শ্রেষ্ঠ ধর্ম পরায়ন হতে৷ বেদব্যাস মহাভারত রচনা করেছিলেন ,মহাভারতের অংশ রূপে গীতাও তাঁর দ্বারাই রচিত বলে মনে  করা হয়৷ গীতার রচনাকাল সম্বন্ধে অনেক রকম মতামত রয়েছে এই ধরায়। ঐতিহাসিকেরা মনে করেন এই গ্রন্থের রচনাকাল খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত যে কোন সময়ের মধ্যে হতে পারে।

গীতার বাণী পড়ুন hd
গীতার বাণী পড়ুন

গীতার ১২ বানী:   

শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা হিন্দু ধর্মগ্রন্থ মহাভারতের একটি অংশ, যেখানে কৃষ্ণ অর্জুনকে ধর্ম, কর্ম ও আত্মার প্রকৃতি সম্পর্কে উপদেশ দেন। গীতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক ও তাদের বাংলা অনুবাদ এখানে দেওয়া হলো:

১. কর্মযোগ (অধ্যায় ২, শ্লোক ৪৭)

কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।

মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সংঘোস্ত্বকর্মণি॥

অর্থ: তোমার কর্তব্য হচ্ছে শুধুমাত্র কর্ম করা, ফলের প্রতি তোমার আসক্তি থাকা উচিত নয়। তুমি কখনোই কর্মের ফলের কারণ হবে না এবং কর্ম না করাতেও আসক্ত হবে না।

২. আত্মার অমরত্ব (অধ্যায় ২, শ্লোক ২৩)

নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ।

ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ॥

অর্থ: আত্মাকে অস্ত্র দ্বারা কাটা যায় না, আগুনে পোড়ানো যায় না, জল দ্বারা ভেজানো যায় না এবং বাতাস দ্বারা শুকনো হয় না।

৩. সাম্যভাব (অধ্যায় ৫, শ্লোক ১৮)

বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি।

শুনি চৈব শ্বপাকে চ পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ॥

অর্থ: জ্ঞানী ব্যক্তি বিদ্বান ব্রাহ্মণ, গরু, হাতি, কুকুর এবং চণ্ডালকে সমানভাবে দেখে।

৪. ভগবানের শরণাগত (অধ্যায় ১৮, শ্লোক ৬৬)

সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।

অহং ত্বাং সর্বপাপেব্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ॥

অর্থ: সব ধর্ম পরিত্যাগ করে আমার শরণ নাও। আমি তোমাকে সকল পাপ থেকে মুক্তি দেব, ভয় করো না।

৫) ভগবান সবসময়ই মানুষের সহায় থাকেন। মানুষের চিন্তাভাবনা, আবেগ, নিশ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে জড়িত থাকে সেই বানী৷ সম্মানকে বিসর্জন দেবেন না যেন।হাজার চেষ্টা করেও আর ফিরে পাবেন না। 

৬)অন্যের ভাগ্যকে নকল না করে নিজের খারাপ ভাগ্য নিয়েই চলার চেষ্টা করুন৷ সেটি অনেক বেশি বাঞ্ছনীয়৷  যা ঘটছে তা ভালর জন্যই ঘটছে এবং যা ঘটবে তা ভালের জন্যই ঘটবে। 

৭) যখন কাউকে কোনও পুরস্কার দেবেন৷ তখন সেটি মন থেকে দেওয়ার চেষ্টা করুন৷ সঠিক স্থানে সঠিক পুরস্কার দেওয়া উচিত৷ কিন্তু কখনও কারোর কাছ থেকে পুরস্কার ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করবেন না৷   

৮) যে তার নিজের সংকল্পে দৃঢ় থাকে সে সহজেই যন্ত্রনা জয় করে সুখ স্বর্গরাজ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয় এবং নিজের আত্মার সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করতে সক্ষম হয়৷  টাকা টাকা করা ছাড়ুন।ভোগ করলেই সুখ নয় বরং ত্যাগ করাটাই উত্তম।   

৯) ভালো কাজ কখনও বিফলে যাবেনা আপনার৷  ধর্মের পথ বেছে নিন আর অধর্ম কে এড়িয়ে চলুন। 

১০) যে কাজটিতে ব্যর্থ হবেন সেটি বারংবার চেষ্টা করুন নতুন করে নয়া উদ্যমে তৈরি করার৷ একদিন না একদিন আপনি সাফল্য পাবেনই৷   

১১) নিজের মন এবং আত্মাকে শুদ্ধ রাখুন৷ লোভ থেকে বিরত থাকুন৷লোভে পাপ-পাপে মৃত্যু,কথায় আছে অতি লোভে তাতী নষ্ট।   

১২) চিন্তাভাবনা আরও বেশি বড় করার চেষ্টা করুন৷ আপনার নিজের যা জ্ঞান রয়েছে৷ সেটির মাধ্যমেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করুন৷ অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হবেন না৷শুধু নিজের কথা ভাবা বন্ধ করুন।মনে রাখবেন সৃষ্টির সকল কিছু নিয়েও ভাবতে হবে।                               

গীতা জীবনের নানান দিক নিয়ে গভীর জ্ঞান প্রদান করে, যা যেকোনো মানুষকে আত্মোপলব্ধি ও সঠিক পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। তুমি কি কোনো নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে গীতার শ্লোক জানতে চাও?

গীতা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তরঃ 

গীতায় মোট কয়টি শ্লোক রয়েছে? উত্তর= ৭০০(সাতশো) টি  গীতায় অর্জুনের ২০(বিশ) টি নাম আছে শ্রীকৃষ্ণের ৩৩(ত্রেত্রিশ) টি নাম উল্লেখ আছে। ৭০০শ্লোকের মধ্যে কার কয়টি শ্লোক উল্লেখ আছে গীতায়.??  উত্তর=৫৭৪টি ধৃতরাষ্টের কয়টা = ১টা সঞ্জয়ের কয়টি= ৪০টি অর্জুনের = ৮৫টি মোট ৭০০শ্লোক। গীতার ১৮ অধ্যায় কে ৩ ভাগ করেছে সেই ৩ ভাগের নাম কি কি.??উত্তর= ১/ প্রথম ৬টিকে বলা হয় কর্ম যোগ ২/ মাঝখানের ৬টিকে বলা হয় ভক্তি যোগ ৩/ বাকী ৬টিকে বলা হয় জ্ঞান যোগ  (ভগবানের মুখশ্রীত বানীর মাহাত্ম্য অনেকে করেছেন যেমন:  ১/ পদ্মপুরানে দেবাদিদেব শিব কর্তৃক গীতার ১৮ টি অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বনর্না আছে এছাড়াও  ২/ শ্রীশংকরাচার্য ৩/ স্কন্দপুরানে ব্যাসদেব।) 

গীতার সারাংশ কোন অধ্যায়কে বলা হয়ে থাকে.? উত্তর: ২য় অধ্যায় এ  গীতায় যোগী শব্দটি ২৮বার আছে,মাং শব্দটি বেশি আছে, যোগ শব্দটি ৭৮বার আছে, যুক্তশব্দটি ৪৯বার আছে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ১৮ দিনের মাঝখানেও শ্রীকৃষ্ণ বিভিন্ন সময় অর্জুনকে গীতার বানী শুনিয়েছেন। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে, আজকের এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মহাবীর অর্জুনকে গীতার বাণী দান করেছিলেন,,, তাই আসুন আমরা গীতা পাঠ করি এবং গীতার  বানী নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করে এক ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণ সেবায় নিয়োজিত হই।

পরিশেষে বলা যায় আপনার হাতে যদি সময় কম থাকে তাহলে জীবনে এই ১২ বাণী আপনি সবসময় স্মরণে রাখবেন দেখবেন আপনার জীবনে অনাবিল আনন্দ চলে আসবে

Comments