"সতীর দেহত্যাগ ও একান্ন শক্তিপীঠ: পৌরাণিক কাহিনী, ইতিহাস ও তাৎপর্য
আদ্যা শক্তি মহামায়া কে কন্যা রূপে পাওয়ার জন্য ব্রহ্মার পুত্র দক্ষ প্রজাপতি শুরু করেছিলেন এক কঠিন তপস্যা। আর এই তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহামায়া দক্ষ প্রজাপতির ঘরে অপরূপ এক কন্যা রূপে আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন কিন্তু যদি কোনদিন কোনরকমভাবে তাঁর অনাদর হয়, তিনি দেহত্যাগ করবেন। কার্যতঃ- হলোও তাই। দক্ষনন্দিনী সতীর বিবাহ হলো দেবাদিদেব মহাদেবের সঙ্গে। দক্ষের প্রবল অহঙ্কার আধিপত্যের জন্য মহাদেবের সঙ্গে হলো দক্ষের বিবাদ। একবার দক্ষ বিরাট এক যজ্ঞের আয়োজন করেন। সেই অনুষ্ঠানে নিজ কন্যা ও জামাতাকে তিনি আমন্ত্রণ জানালেন না। কিন্তু সতী পিতৃগৃহে এতবড় যজ্ঞের আয়োজন শুনে যাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। মহাদেবের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও সান্তী সেই যজ্ঞানুষ্ঠানে হাজির হলেন। দীর্ঘদিন পর পিতা পুত্রী সাক্ষাৎ হলেও দক্ষ নিজ কন্যাকে কোন আদর আপ্যায়ণ করলেন না, পরন্ত শিব নিন্দায় মুখর হয়ে উঠলেন। পিতার মুখে এরূপ স্বামী নিন্দা সহ্য করতে না পেরে সতী দেহত্যাগ করলেন। এদিকে মহাদেব সতীর দেহত্যাগের সংবাদে প্রচণ্ড ক্ষুত্ত হয়ে নিজের জটাজাল ছিন্ন করে সৃষ্টি করলেন শক্তিশালী বীরভদ্রকে। বীরভদ্র মহাদেবের নির্দেশে লণ্ডভণ্ড করলেন দক্ষের যজ্ঞানুষ্ঠান। তৎপরে সতীর নিথর দেহটাকে নিজ স্কন্ধে তুলে নিয়ে বেরোলেন বিশ্বপরিক্রমায়। মহাদেবের রণং দেহি রূপ দেখে ও তাকে শান্ত করবার উদ্দেশ্যে বিষ্ণু নিজ চক্র দ্বারা সতীর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করগেন। সতীর সেই দেহখণ্ড যে সকল স্থানে পতিত হয়েছিল, সেই স্থানগুলিতে গড়ে উঠল শক্তিপীঠ।
![]() |
সতীর দেহত্যাগ ও একান্ন শক্তিপীঠ |
১। হিঙ্গুলা বা হিদুলোটি-পাকিস্তানের বন্দর শহর করাচির উত্তর পূর্বদিকে মরুভূমির ওপর দিয়ে ১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘপথ। এখানে সতীর রমারন্ধ্র পতিত হয়। পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত কালীমন্দির। এই মন্দিরের প্রাধিতাত্রী দেবী হলেন দেবী কোটারী। ভৈরব তীমলোচন। অনেকে এই দেবীকে বলেন "নানী' বা 'মহামারী'।
২। করবীর বা শর্করার-পাকিস্তানে করাচী করাচী থেকে সুত্তর স্টেশনের কিছুদূরে অবস্থিত। এখানে পতিত হয় সতীর ত্রিনেত্র। দেবী হলেন মহিষমর্দিনী, ক্রোধীশ ভৈরব।
৩। সুগন্ধা-বাংলাদেশের বরিশাল শহর থেকে ১৩ মাইল দূরে শিকারপুরে সোন্ধ নদীর ধারে সুগন্ধা। এখানে পতিত হয় সতীয় নাসিকা। দেবীর নাম সুনন্দা। ভৈরব হলেন ত্র্যম্বক।
৪। অমরনাথ-কাশ্মীরের অমরনাথ গুহায় এই মন্দির। গুহার মধ্যে তুষারলিঙ্গের ডানদিকে যে ছোট ডিমের মতো তুবারপিণ্ড তারই নাম পার্বতী বা মহামায়া। এখানে পতিত হয় সতীর কণ্ঠ। দেবী এখানে মহামায়া। ভৈরব বিসদ্যেশ্বর।
৫। জ্বালামুখী-পাঠানকোট থেকে জ্বালামুখী রোড স্টেশন। সেখান থেকে ১৩ মাইল দূরে পাহাড়ের উপরে জঙ্গলের মধ্যে ভৈরব মন্দিরা। এখানে কোন মূর্তি নাই। পাথরের ফাটল দিয়ে আসছে অগ্নিশিখা। এই অগ্নিশিখার মধ্যেই জ্যোতিরূপে মায়ের মূর্তি। শিখা সাতটি। এর মধ্যে একটিরই পূজা হয়। এখানে পতিত হয় সতীর জিহা। দেবীর নাম সিদ্ধিদা। ভৈরবী উন্মত্ত।
৬। জলন্ধর পাঞ্জাবের জলন্ধর ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে নেমে যেতে হয় জালন্ধর পীঠে। সেখানে আছে ফালভৈরবের মন্দির ও মহাবীরের মন্দির। এখানে বিন্ধ্যেশ্বরীর মন্দিরও আছে। এখানে পতিত হয় সতীর এক স্তন। দেবীর নাম ত্রিপুরমালিনী। ভৈরব ভীষণ।
৭। বৈদ্যনাথ-বিহারে বৈদ্যনাথ ধাম বা দেওঘরে পড়েছিল সতীর হৃদয়। রাবণ যেখানে শিবকে এনে রেখেছিলেন সেখানেই পতিত হয় দেবীর হৃদয়। সেজন্য বৈদ্যনাথ শুধু শৈবপীঠ নয়, শক্তিপীঠও। দেবীর নাম দুর্গা। ভৈরব ভৈরব বৈদ্যনাথ।
৮। নেপাল-এখানে পতিত হয় সতীর আনুদ্বয়। নেপালে পশুপতিনাথ মন্দিরের পাশে গুজ্যেশ্বরী মন্দির। নেগালের কোন্ কোন্ স্থানে সতীর এই অস গড়েছিল তার সঠিক কোন নির্দেশ না থাকায় একটা বিভ্রান্তি রয়েই গেছে। এখানে দেবী মহাশিরা ভৈরব কপালী।
৯। মানস-তিব্বতের অন্তর্গত কৈলাস পর্বতের পাদদেশে মানস সরোবর। এখানে একখণ্ড শিলায় দেবী অবস্থিতা। কিন্তু এখানে দেবীর সঠিক কোথায় অবস্থান তা নিয়েও বিভ্রান্তি আছে। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মানস সরোবরকেই একান্নপীঠের অন্যতম বলে উল্লেখ করেছেন। এখানে পতিত হয় দেবীর দক্ষিণহস্ত। এখানে দেবী দাক্ষায়ণী। ভৈরব হলেন অমর।
১০। বিরল্লাক্ষেত্র (উৎকল)- পুরীর মন্দিরের চত্বরেই এই পীঠস্থান অবস্থিত। এখানে পতিত হয় সতীর নাতি। দেবী এখানে বিমলা। ভৈরব হলেন জগন্নাথ। জগন্নাথ মন্দিরের দ্বিতীয় প্রাচীর পার হলে এই মন্দির দেখা যাবে।
১১। গণ্ডকী-এই পীঠস্থানটির সঠিক স্থান নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক আছে। কেউ বলেন, শালগ্রামের কাছে গণ্ডক নদীর উৎপত্তিস্থলে এই পীঠস্থান। আবার কেউ কেউ বলেন, এটা নেপালে মুক্তিনাথ তীর্থ। নেপাল তিকাত সীমান্তে কালী গণ্ডকীর উৎস মাসতং-ই এই পীঠস্থান। পীঠস্থান। এখানে আছে চণ্ড নামে অনাদি লিঙ্গ। নদীর উৎসমুখের কুণ্ডে দেবীয় অবস্থান। কোন মূর্তি নাই। শিলাখণ্ডে পূজা হয়। এখানে পতিত হয় সতীর গণ্ডদেশ।
১২। বহুলা-পশ্চিমবঙ্গে বর্দ্ধমান জেলার কাটোয়া থেকে ৮ কিলোগ্রাম দূরে কেতুগ্রামে অজয় নদীর তীরে এই পীঠস্থান অবস্থিত। এখানে পতিত হয় দেবীর বাম বাহু। দেবীর নাম বছলা। । ভৈরব ভৈরব ভীরুক।
১৩। উজ্জয়িনী বা উজানী-বর্দ্ধমান জেলার গুসকরা স্টেশন হইতে ১৬ কিলোমিটার দূরে উজানী বা কোগ্রাম। এখানে পতিত হয় সতির কনুই। দেবী হলেন মঙ্গলচণ্ডিকা। ভৈরব কপিলেশ্বর।
১৪। চট্টল বা চট্টগ্রাম-বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড ষ্টেশনের কাছে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপর ভবানীর মন্দির। এখানে মন্দিরের কোণে যে অগ্নিশিখা জ্বলছে অনেকেই বলেন ইনিই দেবী ভবানী। এখানে পতিত হয় সতীর দক্ষিণ বাহু। দেবী হলেন ভবানী। ভৈরব চন্দ্রশেখর।
১৫। ত্রিপুরা-ত্রিপুরা রাজ্যের জ্যর উদয়পুর শহরের অদূরে মাতাবাড়িতে অনুচ্চ পাহাড়ী টিলার উপর অবস্থিত এই পীঠস্থান। এখানে পতিত হয় দেবীর দক্ষিণপাদ। দেবীর নাম ত্রিপুরসুন্দরী। ভৈরব হলেন ত্রিপুরেশ।
১৬। ত্রিস্রোতা-পশ্চিমবঙ্গের, জলপাইগুড়ি জেলার বোদা অঞ্চলে শালবাড়ী গ্রামে তিস্তা নদীর তীরে এই পীঠস্থান অবস্থিত। এখানে পতিত হয় দেবীর বামপাদ। দেবীর নাম ভ্রামরী। ভৈরব ঈশ্বর।
১৭। কানগিরি বা কামরূপ কামাখ্যা-আসামের গুয়াহাটির নিকট নীলাচল পাহাড়ে কামাখ্যা মন্দির। এখানে কীলকূট পর্বতের উপর যেখানে দেবীর যোনিদেশ পড়েছিল, তার নাম কুব্জিকা। যোনিদেশ পড়েই হয়েছে প্রস্তরীভূত। এই প্রস্তরই দেবী কামাখ্যা। দেবীর কোন মূর্তি নাই। দেবীর অধিষ্ঠান যোনিপীঠ গহ্বরে। লাল। শালুতে ঢাকা। এখানে দেবী কামাখ্যা। ভৈরব উমানন্দ। কথিত আছে কেউ যদি এই শিলা স্পর্শ করে তবে দেবত্ব লাভ হয়।
১৮। যুগাদ্যা বা ক্ষীর গ্রাম-বর্দ্ধমান জেলার কাটোয়ার কাছে ক্ষীরগ্রাম। এখানে ক্ষীরদীঘির জলে বিগ্রহ ডোবানো থাকে সারাবছর। বৈশাখ সংক্রান্তিতে তুলে এনে পূজা ও মহামেলা হয়। এখানে পতিত হয় দেবীর ডান পায়ের অঙ্গুষ্ঠ। দেবীর নাম যুগাদ্যা বা যোগদ্যা। ভৈরব ক্ষীরশুশুক।
১৯। কালীঘাট-কলিকাতার কালীঘাটে অবস্থিত এই মন্দির। এই মন্দিরের কালী খুবই জাগ্রত। ভাদ্র, পৌষ ও চৈত্র মাসে দেবী দর্শন বিশেষ পুণ্যজনক বলে বিবেচিত হয়। বিগ্রহের মুখ কালো পাথরে তৈরী। জিব, দাঁত, হাত ও মাথার মুকুট সোনার। গলার মুণ্ডমালা সোনা ও রূপার তৈরী। এখানে পতিত হয় দেবীর দক্ষিণ পাদের ৪টি অঙ্গুলী। দেবী হলেন কালিকা। ভৈরব নকুলীশ। প্রতি বৎসর স্নানযাত্রার দিন রুদ্ধদ্বার কক্ষে চোখ বাঁধা অবস্থায় মূর্তিটিকে স্নান করান হয়।
২০। প্রয়াগ-উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদের প্রয়াগ সঙ্গমের নিকট অবস্থিত এই পীঠস্থান। এখানে পতিত হয় দেবীর হাতের অঙ্গুলি। দেবীর নাম ললিতা। ভৈরব ভব।
২১। জয়ন্তী-বাংলাদেশের শ্রীহট্ট জেলার অন্তর্গত জয়ন্তীয়া পরগণায় খাসিয়া পাহাড়ে কলজোর বাউরভোগ গ্রামে অবস্থিত এই পীঠস্থান। এই পীঠস্থান নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। এখানে পতিত হয় সতীর বাইজঙ্ঘা। দেবী হলেন জয়ন্তী। ভৈরব ক্রমদীশ্বর।।
২২। কিরীট বা কিরীটকোণা-মুর্শিদাবাদ জেলায় লালবাগ কোর্ট রোড স্টেশন হইতে প্রায় ৩ মাইল পশ্চিমে বটনগর গ্রামে কিরীটকোণা। এখানে দেবীর যে অঙ্গ পতিত হয় তার নাম কিরীট। দেবী হলেন বিমলা বা কিরীটশ্বরী। ভৈরব হলেন সংবর্ত। পৌষ মাসে প্রতি মঙ্গলবারে এখানে মেলা বসে।
২৩। বারাণসী-উত্তরপ্রদেশে বারাণসীর গঙ্গার ধারে মণিকর্ণিকা ঘাটে এই পীঠস্থান অবস্থিত। এখানে পতিত হয়. সতীর কর্ণকুণ্ডল। দেবী হলেন বিশালাক্ষী। ভৈরব হলেন কাল।
২৪। ন্যাশ্রম-তামিলনাডুতে কুমারী মন্দিরের ভিতরে ভদ্রকালী মন্দির। কিন্তু অন্য মতে সম্ভবতঃ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার কুমারীকুণ্ডে এই পীঠস্থান অবস্থিত। এখানে পতিত হয় দেবীর পৃষ্ঠদেশ। দেবী হলেন সর্বানী। ভৈরব নিমিষ।
২৫। কুরুক্ষেত্র-হরিয়ানায় অবস্থিত ছোট্ট একটা জীর্ণ মন্দিরের মধ্যে লাল কাপড়ে ঢাকা একখণ্ড শিলায় অবস্থান করছেন দেবী। এখানে পতিত হয় দেবীর গুলফ্ বা গোঁড়ালী। দেবী হলেন সাবিত্রী। ভৈরব স্থানু।
২৬। মণিবেদ বা মণিবেদিক-রাজস্থানের আজমীড়ে পুদ্ধরতীর্থের নিকট গায়ত্রী পর্বতে এই পীঠস্থান অবস্থিত। এখানে পতিত হয় দেবীর মনিবন্ধ অর্থাৎ কজি। দেবী হলেন গায়ত্রী। ভৈরব সর্বানন্দ।
২৭। শ্রীশৈল বা শ্রীহট্ট-বাংলাদেশের শ্রীহট্ট শহরে গোত্রাটিকর জৈনপুরে এই পীঠস্থান অবস্থিত। সুরমা নদীর ধারে এক মন্দিরে দেবীর অবস্থান। এখানে পতিত হয় সতীর গ্রীবা। দেবীর নাম মহালক্ষ্মী। ভৈরব সম্বরানন্দ।
২৮। কাঞ্চী-বোলপুর ষ্টেশন হইতে উত্তরপূর্ব দিকে ৪ মাইল দূরে কোপাই নদীর তীরে অবস্থিত এই পীঠস্থান। এই স্থান কঙ্কালীতলা নামেও পরিচিত। মন্দিরের পাশে আছে একটি কুণ্ড। সেখানেই মূল দেবী অবস্থিত। এখানে পতিত হয় দেবীর কঙ্কাল। দেবী হলেন দেবগর্তা। ভৈরব হলেন রুরু।
২৯। ঝালমাধব মধ্যপ্রদেশের অমরকন্টকের নিকটবর্তী পাহাড়ের এক গুহায় শোন নদীর তীরে এইমহাপীঠ। কথিত আছে এই স্থান দর্শন মাত্রেই হয় মন্ত্রসিদ্ধি। এই স্থান নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক আছে। এখানে পতিত হয় দেবীর দক্ষিণ নিতম্ব। দেবী হলেন কালী। ভৈরব অসিতাঙ্গ।
৩০। শোন বা শৈল-মধ্যপ্রদেশের অমরকন্টক তীর্থে নর্মল নদীর উৎসস্থলে এই মহাশক্তি পীঠ অবস্থিত। এখানে পতিত হয় দেবীর বাম নিতম্ব। দেবী হলেন নর্মদা। ভৈরব ভদ্রসেন। ৩১। রামগিরি-উত্তর প্রদেশের ঝাঁসি মানিকপুর রেলপথে চিত্রকূট ষ্টেশন। সেখান হইতে ২ মাইল দূরে রামগিরিতে চিত্রকূট তীর্থ। এখানে পতিত হয় দেবীর দক্ষিণ স্তন। দেবী হলেন শিবানী। ভৈরব হলেন চণ্ড।
৩২। বৃন্দাবন মথুরারোডে বৃন্দাবনের কাছে যমুনার তীরে ভূতেশ্বর মহাদেবের মন্দির। এখানে পতিত হয় সতীর কেশজাল। দেবী হলেন উমা। ভৈরব ভূতেশ।
৩৩। শুচি বা অনল-কন্যাকুমারী ত্রিবান্দ্রম পথে ১১ কি.মি. দূরে শিবমন্দির অবস্থিত। এখানে পতিত হয় দেবীর ঊর্দ্ধদন্ত উর্দ্ধদ পংক্তি। দেবী হলেন নারায়ণী। ভৈরব সংহার।
৩৪। পঞ্চসাগর-এই স্থানের সঠিক অবস্থান জানা নেই। এখানে পতিত হয় দেবীর অধোদন্ত পংক্তি। দেবী হলেন বারাহী। ভৈরব মহারুদ্র।
৩৫। করতোয়াতট-বাংলাদেশের বগুড়া জেলার ভবানীপুর গ্রামে এই পীঠস্থান অবস্থিত। এখানে পতিত হয় দেবীর তল্প (পৃষ্ঠদেশের মাংস)। দেবীর দেহাংশ শিলীভূত। কোন মূর্তি নাই। তবে ভক্তজনের জন্য আছে এক সোনার তৈরী কালীমূর্তি। দেবী হলেন, অপর্ণা। ভৈরব বামেশ।
৩৬। শ্রীপর্বত-কাশ্মীরের অন্তর্গত লাডাকের নিকট শ্রীপর্বত অবস্থিত। ভিন্ন মতে অন্ধ্রপ্রদেশের গুল্টরে শ্রীপর্বতে শ্রীশৈলম। এখানে পতিত হয় দেবীর দক্ষিণ পায়ের গুলফ ও দক্ষিণ কর্ণ। দেবী হলেন শ্রীসুন্দরী। ভৈরব হলেন সুন্দরানন্দ।
৩৭। বিচাষ-পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার তমলুকে অবস্থিত এই পীঠস্থান। উঁচু একটি ভিতের উপর মন্দির প্রতিষ্ঠিত। এখানে দেখী মৎস্যপ্রিয়া। নিত্য ভোগে চাই মৎস্য। এখানে পতিত হয় দেবীর বাম গুলফ। দেবী হলেন ভীমরূপা বা কপালিনী। ভৈরব সর্বানন্দ বা কপালী।
৩৮। প্রভাস-কাথিয়াওয়ারে সোমনাথ মন্দিরের নিকটে ভেরাবল স্টেশন থেকে ৪ কি.মি. দূরে প্রভাসপত্তনে তিনটি নদীর সঙ্গমস্থলে এই পীঠস্থান অবস্থিত। এখানে পতিত হয় দেবীর উদর। দেবী হলেন চন্দ্রভাগা। ভৈরব বক্রতুণ্ড।
৩৯। ভৈরব পর্বত-মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী শহরের অদূরে শিপ্রা নদী তীরে এই ভৈরব পর্বত। এই পর্বতের উপরেই দেবীর পীঠস্থান। এখানে পতিত হয় সতীর উর্দ্ধওষ্ঠ। দেবী হলেন 'অবন্তী। ভৈরব লম্বকর্ণ।
৪০। জনস্থানে বা জলেস্কুলে-মহারাষ্ট্রের নাসিকের নিকট গোদাবরী উপত্যকায় অবস্থিত। এখানে পতিত হয় সতীর চিবুক। মতান্তরে জলে ও স্থলে মায়ের চিবুক পড়ে। দেবী হলেন ভ্রামরা। ভৈরব বিকৃতাক্ষ।
৪১। গোদাবরী তট-অন্তপ্রদেশের রাজমহেন্দ্রী জেলায় অবস্থিত। এখানে গোদাবরী নদীর তীরে স্থাপিত আছে পীঠস্থান কোটিলিঙ্গেশ্বরের মন্দির। এখানে পতিত হয় সতীর গণ্ড। দেবী দেবী হলেন বিশ্বেশী। ভৈরব দণ্ডপাণি।
৪২। রত্নাবলী-সঠিক, স্থান জানা নেই। তবে অনেকের মতে হুগলী জেলার রত্নাকর নদীর ধারে খানাকুল কৃষ্ণনগরেই এই পীঠস্থান। এখানে পতিত হয় দেবীর দক্ষিণ স্কন্দ। দেবী হলেন কুমারী কুমারী। ভৈরব শিব।
৪৩। মিথিলা-নেপালের তরাই অঞ্চলের জনকপুরে এই পীঠস্থান। তবে সঠিক স্থান জানা যায় নি। এখানে পতিত হয় সতীর বামস্কন্দ। দেবী হলেন উমা। ভৈরব মহোদর।
৪৪। নলহাটি-বীরভূম জেলার নলহাটি ষ্টেশন থেকে কিছু দূরে অনুচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় ললাটেশ্বরী দেবীর মন্দির। এখানে পতিত হয় সতীর নলা। দেবী হলেন কালী। ভৈরব যোগীশ।
৪৫। কর্ণাট-সঠিক অবস্থান জানা নেই। এখানে পতিত হয় দেবীর কর্ণদ্বয়। দেবী হলেন জয়দুর্গা। ভৈরব অভীক।
৪৬। বক্রেশ্বর-পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার দুবরাজপুর স্টেশনের কিছুদূরে শ্মশানভূমিতে অবস্থিত এই পীঠস্থান। এখানে পতিত হয় দেবীর মন। দেবী হলেন মহিষমন্দিনী। ভৈরব বক্রনাথ।
৪৭। যশোর-বাংলাদেশের খুলনা জেলার ঈশ্বরীপুরে অবস্থিত। এখানে পতিত হয় দেবীর পাণিপদ্ম। দেবী হলেন যশোরেশ্বরী। ভৈরব চণ্ড।
৪৮। অট্টহাম-বীরভূম জেলার লাভপুর ষ্টেশন হইতে ২ কি.মি. দূরে অবস্থিত এই পীঠস্থান। ভিন্ন মতে এই পীঠস্থান অবস্থিত বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামে। এখানে পতিত হয় দেবীর ওষ্ঠ। দেবী হলেন ফুল্লরা। ভৈরব বিশ্বেশ।
৪৯। নন্দীপুর-বীরভূম জেলার সাঁইথিয়া রেল স্টেশনের পাশে পাঁচিল ঘেরা জায়গায় একটা বটগাছের নীচে এই দেবীপীঠ অবস্থিত। এখানে 'পতিত হয় সতীর হার। দেবী হলেন নন্দিনী। ভৈরব নন্দিকেশ্বর।
৫০। লঙ্কা-এর সঠিক অবস্থান জানা নেই। রাক্ষসেম্বর নামে ভৈরবের পরিচয় দেখে মনে হয় রাক্ষসরাজ রাবণের লঙ্কাতেই (বর্তমান শ্রীলঙ্কা) এই পীঠস্থান হতে পারে। এখানে পতিত হয় দেবীর নুপুর। দেবী হলেন ইন্দ্রাক্ষী। ভৈরব রাক্ষসেম্বর।
৫১। বিরাট-এই স্থান সম্বন্ধে সঠিকভাবে কিছু জানা যায় নি। তবে মহাভারতে উল্লিখিত বিরাটপুরী নাম হতেই এই নামের উৎপত্তি মনে হয়। বিরাট দেশ রাজপুতানার জয়পুর, আলোয়ার ও ভরতপুর অঞ্চলে অবস্থিত। অনেকের অনুমান এই অঞ্চল উত্তরবঙ্গের কোথাও হতে পারে। এখানে পতিত হয় দেবীর উত্তর পাদাঙ্গুলি। দেবী হলেন অম্বিকা। ভৈরব অমৃতাক্ষ।
Comments
Post a Comment