শিবপূজার সঠিক বিধি ও নিয়ম - সম্পূর্ণ গাইড
শিব হলেন স্বয়ং মহাদেব যাকে আমরা মহাদেব ভোলানাথ হিসেবে জানি। আর এই মহাদেব বা শিব হলেন সৃষ্টি, স্থিতি ও সংহারের একমাত্র অধিকারী। শিবের পূজা এজন্য ফলপ্রদ হয়ে থাকে। এই পূজা সাধারণত সোমবার, মহা শিবরাত্রি ও প্রদোষ কালে হয়ে থাকে।
মুক্তিকা নির্মিত শিবপূজা বিধি
(দুইটি শিবলিঙ্গ একত্র রাখিয়া পূজা করিবেন না। একটির পুজা হইলে পরে আর একটি নির্মাণ করিয়া পুজা করিবেন)।
![]() |
শিবপূজার সঠিক বিধি |
অঙ্গুষ্ঠ পরিমিত সব শিবলিঙ্গ নির্মাণ করিয়া উত্তরদিকে পিনাক স্থাপন ও বিশ্বপত্রদ্বারা তদগাত্রমার্জনপূককে ঐ পরের মধ্যদলের সোজা পৃষ্ঠের উপর বসাইবেন (তাম্র, কাংস্য, স্বর্ণ বা রৌপ্য পাত্রে শিবপূজা প্রশস্ত) ও স্বয়ং উত্তরাস্য হইয়া বসিবেন। ভস্ম বা মৃত্তিকা দ্বারা কপালে রিপুশুক (অর্থ চন্দ্রাকৃতি) এবং রুদ্রাক্ষের মালা ধারণ করিয়া শিবপূজা করিবেন। ও হরায় নমঃ বলিয়া শিবের মস্তকে কিঞ্চিৎ জল দিয়া বজ্র নামাইয়া পিনাকের উপর রাখিবেন। ও মহেশ্বরায় নমঃ বলিয়া শিবের মস্তকটি একটু টিপিয়া গঠন করিবেন। ও শূলপাণে ইহ সুপ্রতিষ্ঠিতো ডব বলিয়া লিঙ্গের উপর আতপ চাউল দিয়া প্রতিষ্ঠা করিবেন।
শিবের ধ্যান-ও ধ্যায়েন্নিত্যং^ মহেশং রজতগিরিনিভং_- চারুচন্দ্রাবতংসং, রত্নাকঙ্গোঙ্খলাসং পরশুমৃগবরাভীতিহস্তং। প্রসন্নং, পদ্মাসীনং সমস্তাৎ স্তুতমমরগণৈব্যায়বৃত্তিং বসানং, বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভ্যয়হরং পঞ্চবকৃত্রং ত্রিনেত্রম্।। এইরূপ ধ্যান করিয়া আবাহনাদি পঞ্চমুদ্রার দ্বারা আবাহন করিবেন।
পঞ্চমুদ্রা যথা-১। চিত্তাবে অঞ্জলি করিয়া উভয় অঙ্গুষ্ঠ উভয় অনামিকার মূলে যোগ করিবেন।
২। এঐরূপ অগুলিকে অধোমুখে করিবেন।
৩। অঙ্গুষ্ঠদ্বয় উচ্চ করিয়া উভয় মুষ্টি মুখোমুখি করিয়া যোগ করিবেন।
৪। ঐরূপ মুক্তিদ্বয়ের মধ্যে অঙ্গুষ্ঠদ্বয়কে প্রবেশ করাইবেন, ঐরূপ মুষ্টিদ্বয়কে চিৎ করিয়া ধরিবেন।
মন্ত্র যথা-ও পিণাকর্তৃক ইহাগচ্ছ, ইহাগচ্ছ, ইহতিষ্ঠ, ইহতিষ্ঠ, ইহ সন্নিধেহি, ইহ সঙ্গিকছ্যস্ব অত্রাধিষ্ঠানং কুরু (করযোড়ে)
ছাং স্বীং স্থিরো ভব মম পুজাং গৃহাণ।
শিবের স্নান মন্ত্র- ইদং স্নানীয়োদবগ ও পশুপতয়ে নমঃ, এই মন্ত্রে কেবল জলহারা শিবকে তিনবার স্নান করাইবেন। পরে পাদ্যাদি দ্বারা পূজা করিবেন। এতৎ পাদ্যং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। ইদমর্থ্যং ও নমঃ শিবায় নমঃ। ইদমাচনীয়ং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। ইদং স্নানীয়জলং ও নমঃ শিবায় নমঃ। এষ গন্ধঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। এতৎ পুষ্পং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। এতৎ সচন্দনবিন্ধপত্রং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। এষ ধূপঃ ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। এষ দীপঃ ও নমঃ শিবায় নমঃ। এতৎ সোপকরণনৈবেদ্যং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। ইদমাচনীয়ং ওঁ নমঃ শিবায় নমঃ। পরে গৌরীপিঠে (পিণাকের মূলে) এ গৌর্যো নমঃ" এই ময়ে পঞ্চোপচারে গৌরীর পুজা করিবেন। অনন্তর অষ্টমূর্তির পূজা করিবেন।
"ও সর্ব্বায়_ ক্ষিতিমূর্তয়ে^ নমঃ_ (পূর্ব্বে) ও ভবার জলমূর্তয়ে নমঃ (ঈশানকোণে) ও রুদ্রায় অগ্নিমূর্তয়ে (শক্তিলভযন না করিয়া) নমঃ (নৈর্ঝতে), ও মহাদেবায়.. সোমমূর্তরে নমঃ.. (দক্ষিণে), ও ঈশানায় সুর্যামুয়ে নমঃ (অগ্নিকোণে)।
সর্ব্বত্র 'এতে গন্ধপুষ্পে' উল্লেখ করিবেন। পুষ্পাভাবে এতে 'গন্ধ্যক্ষতে যা এতদুদকং। পূজল মাত্রেই এই নিয়ম জানিবেন। তৎপরে "ব্রহ্মাদ্যউমাতৃকাভ্যো নমঃ বৃষভায়ঃ নমঃ" এবং "ইন্দ্রাদি দশদিকপালেভ্যো নমঃ"-মন্ত্রে পূজা করিয়া, "নমঃ শিবায়ঃ" (দ্বিজজাতিরা ওঁ নমঃ -শিবায়) 'এই মন্ত্র ১০ ব/ ১০৮ বার জপ করিয়া-ও গুহ্যাতিগুহাগোপ্তা^ ত্বং গৃহাণাক্ষৎ_-কৃতং জপং। সিদ্ধির্ভবতু মে দেব তৎপ্রসাদাত্মহেশ্বরঃ।। এই মন্ত্রে জলগণ্ডুষ শিবের দক্ষিণ প্রস্তের উদ্দেশ্যে দিয়া জপ সমর্পণ করিবেন।
শিব প্রণাম: নমস্তভ্যং বিরূপাক্ষ নমস্তে দিব্যচক্ষুষে। নমঃ পিণাকহস্তায় বজ্রহস্তার বৈ নমঃ।। নমন্ত্রিশূলহস্তায়। ব্লওপাশাংসিপাণয়ে। নমস্ত্রৈলোক্যনাথায় ভূতানাং পতয়ে নমঃ। শিবায় শান্তায়কারণত্রয়হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বর।। নমস্তে ত্বং মহাদেব লোকানাং গুরুমীশ্বরম্। পুসোমপূর্ণকামানাং কামপুরামরা ভূমিপম্। তৎপরে দক্ষিণহস্তের অঙ্গুষ্ঠ ও তজ্জনী দ্বারা দক্ষিণ গণ্ডে আঘাত করিয়া বম্ বম্ শব্দে মুখবাদ্য করিবেন।
ক্ষমা প্রার্থনা:-আবাহনং ন জানামি নৈব জানাবি পূজনং। বিসর্জনং ন জানামি ক্ষমস্ব পরমেশ্বরঃ।। সংহারমুদ্রার দ্বারা একটি নির্মাস্য লইয়া ঘ্রাণান্তে "মহাদেব ক্ষমত্ব" বলিয়া বিসর্জনপূর্ব্বক শিবের মাথায় একটু জল দিয়া শিবকে কাৎ করিয়া রাখিবেন। ঈশানকাণে ত্রিকোণ মণ্ডল করিয়া সংহারমুদ্রদ্র যারা পূজাধার হইতে একটি নির্মাল্য লইয়া ঘ্রাণান্তে তেজোময় দেবতাকে। শ্বাসপথ দ্বারা হৃৎপরে পুনঃ স্থাপন করিলাম, এইরূপ চিন্তা করতঃ পূর্ব্বকৃত মণ্ডলে রাখিয়া চণ্ডেশ্বরায় নমঃ বলিয়া নির্মাল্য দ্বারা পুষা করিবেন। অনেকে নিত্য শিবপূজা করিয়া সন্তানাদির মঙ্গলার্থ পুনর্ব্বার শিবপূজা করিয়া থাবেন। পূজান্তে দেবতাকে নির্মাল্যে রাখিতে নাই। কি দিবা কি রাত্রি সকল সময়েই উত্তরমুখে শিবপূজা কর্তব্য।।
পার্থিব-শিবপূজার পদ্ধতি অনুসারে বাণলিঙ্গেরও পুরা হইবে। কেবল "নমঃ শিবায় নমঃ" ছলে "হ্রেীং বাণেশ্বরায় নমঃ" বলিবেন। কিন্তু ধ্যানের ও প্রণামের মন্ত্র পৃথক। বাণলিসের এবং প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গের প্রতিষ্ঠা ও আবাহন নাই, কেবল ধ্যান, স্নান ও পুজা আছে। কেহ কেহ বেদবিহীন। বেদবিহীন শিবলিসস্থসে অউমূর্তির পুজা করেন না।
বাণলিজের স্নান মন্ত্রঃ-ও ত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্তনং। উর্ধ্বারুকমিব বন্ধনামৃত্যোমুক্ষীয় মামৃতাৎ।। পরে কুর্মমুদ্রা দ্বারা পুষ্প লইয়া ধ্যান করিবেন। ধ্যান-এ ঐং প্রমত্তা শক্তিসংযুক্তং বাণাখ্যক মহাপ্রভং। কামবাণান্বিতং দেবং সংসারদহনক্ষমং। শৃঙ্গারানিরসোল্লাসং বাণাখ্যং পরমেশ্বরং।।
প্রণাম মন্ত্রঃ-ও বাণেশ্বরায়' নরকার্ণবতায়ণায় জ্ঞানপ্রদায় করুণাময়সাগরায়। কপুরকুন্দধবলেন্দু জটাধরায় দারিদ্র্যদুঃখদহনায় নমঃ শিবায়।।
শিবপূজার সঠিক নিয়ম কি?
প্রস্তুতি
শিব পূজার প্রস্তুতি শুদ্ধতা: প্রথমে আপনাকে স্নান করে পরিষ্কার কাপড়-চোপড় পরিধান করুক এরপর সমস্ত পূজার উপকরণ ও পূজার স্থান শুদ্ধ করে নিন অবশ্যই গঙ্গাজল বা দুধ দিয়ে শোধন করবেন।
আসন:কুশা ঘাসের তৈরি আসনে পূর্ব দিকে বা উত্তর দিকে মুখ করে আসনে বসতে হবে।
উপকরণ:
শিব পূজায় গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ গুলি হল: শিবলিঙ্গ (পাথর বা ধাতুর), বিল্বপত্র, দুধ, দই, মধু, ঘি, জল, ধূপ, দীপ, ফুল (বিশেষত ধুতুরা বা নীলকন্ঠ ফুল), অক্ষত (চাল), ফল, বেলপাতা (৩ বা ১১টি)।
শিব পূজার ধাপ
সংকল্প: "ওঁ নমঃ শিবায়" মন্ত্রে পূজার উদ্দেশ্য ঘোষণা করুন (যেমন—মোক্ষ, স্বাস্থ্য বা কামনা পূরণ)।
ধ্যান:
শিবের ধ্যান করুন:
"ওঁ ধ্যায়েত্ নিত্যমহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসং..."
আবাহন:শিবলিঙ্গে জল ঢেলে আবাহন করুন; "ওঁ আয়াতু ভগবান্ শঙ্করঃ."
অর্ঘ্য:শিবলিঙ্গে জল, দুধ, মধু, দই, ঘি (পঞ্চামৃত) ও গঙ্গাজল অর্পণ করুন।
বিল্বপত্র অর্পণ:১০৮ বা ১১টি বেলপাতা "ওঁ নমঃ শিবায়" মন্ত্রে অর্পণ করুন (একটি পাতায় একবার মন্ত্র)।
অভিষেক:দুধ, জল, ঘি দিয়ে শিবলিঙ্গ স্নান করান। রুদ্রাক্ষের মালা দিয়ে জপ করুন।
চন্দন ও ফুল:চন্দন লেপন করুন ও ফুল অর্পণ করুন।
ধূপ-দীপ:ধূপ (গুগ্গুল বা লোবান) ও ঘিয়ের দীপ দেখান।
নৈবেদ্য:ফল, মিষ্টান্ন (বিশেষত বেলফল বা ধুতুরা) নিবেদন করুন।
আরতি:"ওঁ জয় শিব ওঙ্কার..." মন্ত্রে আরতি করুন।
প্রণাম:শিবের ১০৮ বা ১২ নাম জপ করুন ("ওঁ নমঃ শম্ভবায় চ..")।
পরিবেশন:প্রসাদ ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করুন।
বিশেষ নির্দেশ: সোমবার ও প্রদোষ কাল (চন্দ্রগ্রহণের সময়) শিবপূজার উত্তম সময়। মহাশিবরাত্রিতে রাত্রিজাগরণ ও অখণ্ড দীপ জ্বালানো শ্রেষ্ঠ। বিল্বপত্র ছাড়া শিবপূজা অসম্পূর্ণ বলে গণ্য হয়।
মনোযোগ:ভক্তি ও শুদ্ধচিত্তে পূজা করাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মের চেয়ে আন্তরিকতাই প্রধান।
বিশেষ্য ঘোষণা
এই পঞ্জিকায় যেসব মহাপুরুষগণের তিরোভাব ও আবির্ভাব দেওয়া হয়েছে, যদি ইহাতে কোন ত্রুটি থাকে তাহলে অবশ্যই পত্র দিয়া সংশোধনের জন্য আমাদের জানাবেন। এছাড়াও যদি কোন বিশিষ্ট মনীষীদের আবির্ভাব ও তিরোভাব দিতে চান তাহলে উক্ত মহাপুরুষের ছবি ও বর্ণনা সহ এবং ওনার আশ্রম ও আশ্রমের শিষা-সংখ্যা, কত তাহা আশ্রমের লেটারপ্যাডে লিখে পাঠাবেন। আমরা পরবর্তী সময়ে প্রকাশের জন্য বিবেচনা করবো।
Comments
Post a Comment