সত্যিই, শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী ও পুত্র সংখ্যা নিয়ে অনেকের মনে বিভ্রান্তি আছে। পুরাণ, মহাভারত ও বিভিন্ন শাস্ত্রে নানা তথ্য পাওয়া যায়। চলো, পরিষ্কারভাবে বিষয়টা ব্যাখ্যা করি।
ভগবান কৃষ্ণের অজানা তথ্য- হিন্দু ধর্মে, মহান ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে সবচেয়ে রহস্যময় দেবতাদের মধ্যে একজন মনে করা হয়েছিল। তিনিই একমাত্র হিন্দু দেবতা যাকে সারা বিশ্বে পূজা করা হয়। ভগবান কৃষ্ণের শিক্ষা ও চিন্তাধারা কারো জীবনকে ইতিবাচকভাবে পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট। বিভিন্ন দেশের মানুষের তার প্রতি এত গভীর বিশ্বাসের একমাত্র কারণ। সারা বিশ্বে তাঁর শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব মহান শ্রীল প্রভুপাদের কাছে যায় যিনি ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এখন, ইসকন দ্বারকা এবং অন্যান্য ইসকন সম্প্রদায় তার উদ্যোগকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ভগবান কৃষ্ণের ৮০ পুত্র সম্পর্কে আকর্ষণীয় তথ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অত্যন্ত রহস্যময় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। কৃষ্ণের সবচেয়ে মজার তথ্য হল তিনি প্রায় ১৬,১০৮ জন স্ত্রীকে বিয়ে করেছিলেন। প্রবাদ অনুসারে, প্রতিটি স্ত্রী ১০টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এবং প্রতিটি সন্তানের মধ্যে ভগবান কৃষ্ণের কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল! কিন্তু, ১৬,১০৮ এর মধ্যে, মাত্র ৮ জন রানী ছিল।
অর্থাৎ তাদের মধ্যে বৈবাহিকসূত্রে প্রধান স্ত্রী ছিলেন আটজন যাদের একত্রে বলা হয় অষ্টভার্য এবং বাকি ১৬১০০ জন ছিলেন নরকাসুরের অন্তঃপুর থেকে উদ্ধার হওয়া ধর্মাবতার কৃষ্ণে সমর্পিত ও তার অধিকারপ্রাপ্ত নারী । কিন্তু এদের প্রত্যেককে দেবী লক্ষ্মীর অবতার হিসেবে মনে করা হয়।আর এই আটজনের প্রত্যেকের গর্ভেই শ্রীকৃষ্ণের দশটি পুত্র এবং একটি কন্যার জন্ম হয়েছিল।
সুতরাং, প্রশ্ন হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কয়টি পুত্র ছিল? আজ আমরা সেই 8৮ রানী এবং তাদের ৮০ জন পুত্রের সমস্ত আলোচনা করতে যাচ্ছি।
৮ জন স্ত্রীর নাম ও ছেলের নাম নিম্নে বর্ণনা করা হলো- কৃষ্ণের কতজন স্ত্রী ছিল?
 |
কৃষ্ণের আটজন স্ত্রীর ছবি |
৮ জন স্ত্রীর নামঃ
১)রুক্মিণী,
২)সত্যভামা,
৩)কালিন্দী,
৪)লক্ষ্মণ,
৫)ভাদ্র,
৬)নাগনাজিতি,
৭)জাম্ববতী এবং
৮) মিত্রবিন্দ।
এই ০৮ স্ত্রীদের থেকে ভগবান কৃষ্ণের ৮০ জন পুত্রের নাম নিম্নে দেওয়া হল: শ্রীকৃষ্ণের পুত্রের নাম?
রুক্মিণীর ১০ ছেলে হলো: চারু, চারু দেশনা, চারুদেহা, চারুচন্দ্র, ভদ্রচারু, বিচারু, সুদেষ্ণা, সুচারু, চারুগুপ্ত এবং প্রদ্যুম্ন।
সত্যভামার ১০ ছেলে হলো: ভানু, স্বভানু, সুভানু, ভানুমান, প্রভানু, অতিভানু, প্রতিভানু, শ্রীভানু, ব্রুহদভানু, এবং চন্দ্রভানু।
কালিন্দীর ১০ ছেলে হলো: কবি, সুবাহু, শান্তি, পূর্ণমাস, বৃষ, সোমক, বীর, ভাদ্র, শ্রুত এবং দর্শ।
লক্ষ্মণ এর ১০ ছেলে হলো: প্রবাল, বাল, ওজা, সহ, অপরাজিত, প্রবোধ, সিংহ, গাত্রবান, মহাশক্তি এবং উর্ধ্বগ।
ভাদ্রের ১০ ছেলে হলো: সত্যক, শূর, অরিজিৎ, বম, জয়, আয়ু, সংগ্রামজিৎ, প্রহরণ, ব্রুহতসেন এবং সুভদ্রা।
নাগনাজিতির ১০ ছেলে হলো: কুন্তী, ভেগবান, আম, বীর, বাসু, অশ্বসেন, বৃষ, শঙ্কু, চন্দ্র এবং চিত্রগু।
জাম্ববতীর ১০ ছেলে হলো: বিজয়, ক্রুতু, সাম্বা, সুমিত্রা, দ্রবীণ, শতজিৎ, পুরুজিৎ, বসুমান, শস্রজিৎ এবং চিত্রকেতু।
মিত্রবিন্দ এর ১০ ছেলে হলো: হর্ষ, ক্ষুধী, আনন্দ, ব্রুক, মহাশ, পবন, অনিল, বর্ধন, বনহি এবং গৃহ।
 |
কৃষ্ণের ৮০ জন পুত্রের ছবি |
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু পুত্রের চারিত্রিক বর্ণনাঃ
সাম্বা: ভগবান কৃষ্ণের সবচেয়ে কুখ্যাত পুত্র আমরা সবাই জানি যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর প্রশংসনীয় প্রকৃতির জন্য বিখ্যাত। কিন্তু, এটা বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন যে তার ছেলেরা এত জনপ্রিয় ছিল না। মহাভারতের যুদ্ধে সাম্বা নামে তার এক পুত্রের ভূমিকা খুবই ছোট। বেশিরভাগ লোকই তাকে ভগবান কৃষ্ণের মতো মনে করেছিল, কিন্তু ভগবান কৃষ্ণ অনুভব করেছিলেন যে তিনি অনেক দিক থেকে ভগবান শিবের মতো।
প্রদ্যুম্ন: শয়তান সম্বরের গল্প শেষ তিনি হলেন ভগবান কৃষ্ণের আরেক পুত্র যিনি একটি আকর্ষণীয় অথচ অজানা গল্প রাখেন। বলা হয় সাম্বার মৃত্যুর পেছনে তিনিই একমাত্র শক্তি। তিনি তরবারি দিয়ে সাম্বার মাথা কেটে ফেললেন। এইভাবে তিনি কিছু খ্যাতি এবং স্বীকৃতি সংগ্রহ করেছিলেন এবং এই ঘটনাটি কৃষ্ণের পুত্রদের কিছু নতুন মজার তথ্য যোগ করে। আমরা সকলেই জানি যে ভগবান কৃষ্ণ এমন একটি শক্তির নাম যা প্রতিটি নেতিবাচক চিন্তাকে ইতিবাচক চিন্তায় রূপান্তর করতে পারে। তাঁর শিক্ষা ও বাণী খুব সহজেই অশুভ আত্মাকে বিলুপ্ত করতে পারে।
হ্যাঁ, শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী ও পুত্র সংখ্যা নিয়ে অনেক সময় বিভ্রান্তি দেখা দেয়, কারণ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও পুরাণে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। নিচে কিছু মূল তথ্য তুলে ধরা হলো যাতে এই বিভ্রান্তি কিছুটা পরিষ্কার হয়:
কৃষ্ণের স্ত্রী ও পুত্র সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির কারণ:
বিভিন্ন পুরাণে তথ্যের অমিল।
প্রতীকী সংখ্যা ব্যবহার (যেমন ১৬,১০৮ স্ত্রী মানে হতে পারে—অসীম ভক্তি বা শক্তির রূপক)।
পৌরাণিক ভাষায় অতিরঞ্জন বা অলংকার।
তুমি চাও তথ্যভিত্তিক, গল্পের মতো করে, আর তুলনামূলক ব্যাখ্যায়—তাহলে চল, আমি তিনভাবে বিষয়টা বোঝানোর চেষ্টা করি:
১.কৃষ্ণের স্ত্রী সংখ্যার তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ:
স্ত্রী সংখ্যা:
উৎস সংখ্যা ব্যাখ্যা
সাধারণ পুরাণ ৮ জন অষ্টমহিষী বা প্রধান রানী
ভাগবত পুরাণ ১৬,১০৮ জন নারকাসুর থেকে উদ্ধার করা ১৬,১০০ নারী + ৮ জন প্রধান স্ত্রী
রুক্মিণী ছিলেন প্রথম স্ত্রী, এবং তাঁকে মনে করা হয় কৃষ্ণের সর্বাধিক প্রিয়।
২.শ্রীকৃষ্ণের পুত্র সংখ্যা ভিত্তিক বিশ্লেষণ :
প্রত্যেক প্রধান স্ত্রীর একাধিক সন্তান ছিল। প্রদ্যুম্ন, রুক্মিণীর পুত্র, অন্যতম বিখ্যাত—তাঁকে কামদেবের অবতারও মনে করা হয়।
১৬,১০০ স্ত্রী থেকে প্রতিটি স্ত্রীর একজন করে পুত্র ছিল—এভাবে ১৬,১০০ জন পুত্রের কথা উল্লেখ আছে। অর্থাৎ, প্রধান স্ত্রীর সন্তানরা ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ, বাকিদের পুত্রদের ব্যাপারে অনেকটা প্রতীকী বা সম্মানসূচক উল্লেখ।
আসুন গল্পের মতো করে জেনে নেই স্ত্রী ও পুত্র সংখ্যার কারণ:
শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন দ্বারকাধীশ—দ্বারকার রাজা। তিনি একদিকে যেমন রাজনীতি, ধর্ম ও ন্যায়ের ধারক ছিলেন, তেমনি তাঁর জীবনের এক অধ্যায় ছিল প্রেম, ভালোবাসা ও দায়িত্ব।
একবার নারকাসুর নামক এক রাক্ষস অসংখ্য রাজকন্যাকে অপহরণ করে নিজের প্রাসাদে বন্দী করে রাখে। কৃষ্ণ সেই রাক্ষসকে বধ করে সব কন্যাকে মুক্ত করেন।
কিন্তু তখন এক প্রশ্ন—এই নারীদের কে গ্রহণ করবে? সমাজ তাঁদের গ্রহণ করতে নারাজ।
তখন কৃষ্ণ তাঁদের সম্মান রক্ষার্থে সবাইকে বিয়ে করেন। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বোঝানো হয় যে কৃষ্ণ শুধু দেবতা নন, তিনি সমাজ ও নারীর সম্মান রক্ষার প্রতীক।
৩. তুলনামূলক ব্যাখ্যা:
দিক ভক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ঐতিহাসিক / প্রতীকী দৃষ্টিভঙ্গি স্ত্রী সংখ্যা,কৃষ্ণের অসীম শক্তি ও প্রেমের প্রতীক,পুরাণে অলংকারমূলক সংখ্যা
পুত্র সংখ্যা ধর্ম ও দায়িত্ব রক্ষার প্রতিফলন, প্রতীকীভাবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন অনেক বৈষ্ণব মতবাদে এই সব স্ত্রী ও সন্তান আসলে কৃষ্ণের বিভিন্ন শক্তির রূপ, ভক্তির রূপ, বা মায়ার প্রকাশ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়।
কৃষ্ণের বহুবিবাহ নিয়ে আলোচনা করলে ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং দার্শনিক—তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকেই বিশ্লেষণ করা যায়।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে:
ভগবান কৃষ্ণের জীবনে যে বহুবিবাহের উল্লেখ পাওয়া যায়, তা মূলত ধর্মীয় কাহিনি ও পুরাণে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাঁর প্রধান পত্নী ছিলেন রুক্মিণী, তবে আরও অনেক রাণীও ছিলেন—যেমন সত্যভামা, জম্ভবতী প্রমুখ। বলা হয়, নারকাসুর নামে এক অসুরকে পরাজিত করার পর, তার বন্দিনী ১৬,১০০ নারীকে মুক্ত করে কৃষ্ণ তাঁদের সামাজিক মর্যাদা রক্ষার জন্য বিবাহ করেন। এখানে প্রেম নয়, নৈতিক দায়িত্ব ও করুণা প্রাধান্য পায়।
নৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে:
এই বিবাহগুলোকে অনেক সময় প্রতীকী হিসেবে দেখা হয়—কৃষ্ণ সব জীবের রক্ষক, এবং এই বিবাহগুলি তাঁর সর্বজনগ্রাহ্যতা, সর্বজনে আসক্তি ও সেবার প্রতীক।
দার্শনিক ব্যাখ্যা:
ভক্তিরসমূলক দর্শনে কৃষ্ণকে পরম পুরুষ এবং ভক্তদের অন্তরাত্মার প্রেমাস্পদ হিসেবে দেখা হয়। কৃষ্ণের লীলাময় জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ঈশ্বরের অসীম রূপ ও প্রেমের প্রতিফলন অন্যতম মাধ্যম।
তবে এসব বিবাহ আধুনিক সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে তুলনা করলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে, কারণ সেগুলোর মূলত ভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট ছিল।
মন্তব্য আসুন আমরা সবাই কৃষ্ণ প্রেমে মজে গিয়ে হরিনাম প্রচার করি। শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী ও পুত্র সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিতে না থেকে ধর্মের পথে চলি।
Comments
Post a Comment