মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র বাংলা অনুবাদ

মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র একটি সর্বরোগ হরণকারী মন্ত্র। এই মন্ত্রটি ভগবান মহাদেবকে স্মরণ করে রচিত। এই মন্ত্রটি ঋগ্বেদেও দৃষ্ট হয় - আবার এই মন্ত্রটি মার্কণ্ডেয় পুরাণেও দৃষ্ট হয়। এই মন্ত্রটি জপ করলে মানুষ সব অশান্তি , রোগপীড়া , ব‍্যাধি থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত হয়। নিরাকার মহাদেবই মৃত‍্যুমুখী প্রাণকে বলপূর্বক জীবদেহে পুণঃ প্রতিষ্ঠিত করেন এবং অপার শান্তিদান করেন।
মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র hd
মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র


এই মন্ত্রটির সাথে একটি কাহিণী প্রচলিত আছে। সেটি হল - মহর্ষি মৃকন্ডু এবং তাঁর পত্নী মরুদবতী পুত্রহীণ ছিলেন। তারা তপস‍্যা করেন মহাদেবকে সন্তুষ্ট করেন এবং এক পুত্র লাভ করেন , যার নাম হল মার্কন্ডেয়। কিন্তু মার্কন্ডেয়র বাল‍্যকালেই মৃত‍্যুযোগ ছিল। অভিজ্ঞ ঋষিদের কথায় বালক মার্কন্ডেয় শিব লিঙ্গের সামনে মহামৃত‍্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করতে লাগলেন। যথা সময়ে যম রাজ এলেন। কিন্তু মহাদেবের শরণে আসা প্রাণকে কেইবা হরণ করতে পারে ! যমরাজ পরাজিত হয়ে ফিরে গেলেন এবং মার্কন্ডেয় মহাদেবের বরে দীর্ঘায়ু লাভ করলেন। পরে তিনি মার্কন্ডেয় পুরাণ রচনা করলেন।  মার্কন্ডেয় ঋষি মহাদেবের স্তুতি করলেন মহামৃত‍্যুঞ্জয় স্তোত্রের মাধ‍্যমে যেটি মার্কন্ডেয় পুরাণে পাওয়া যায়।

দেবলোকের অমৃত সন্ধানে মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের ঐশ্বরিক ক্ষমতা।  বেদের অন্দরে নজর রাখলে জানতে পারবেন সেখানে এমন সব মন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে, যা প্রতিদিন পাঠ করলে শারীরিক এবং মানসিক শক্তি এতটাই বেড়ে যায় যে রোগ, দুঃখ সহ জীবনের সব খারাপ কিছু নিমেষে ঘুঁচে যায়।
সত্যিই কি মৃত্যু জয়ের মন্ত্রের সন্ধান পাওয়া সম্ভব?

একেবারেই সত্যিই সম্ভব। আর তার জন্য বেদ-উপনিষদ উল্টে দেখতে হবে না, বরং এই প্রবন্ধে চোখ রাখলেই সেই শক্তির সন্ধান মিলবে। এই লেখায় যে বিশেষ মন্ত্রটির বিষয়ে আলোচনা করা হল, তা হল মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র। একাধিক প্রাচীন গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়, এই মন্ত্রিটি নিয়মিত যপ করলে শরীরের অন্দরে লুকিয়ে থাকা যে কোনও রোগ এবং ক্ষত সেরে যেতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, আয়ুও বৃদ্ধি পায়। বেদের কথাঃমহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র আসলে ভগবান শিবের মন্ত্র। ঋক বেদে উল্লেখ পাওয়া যায় এই মন্ত্র বলে মৃত্যুকেও জিতে নেওয়া সম্ভব। যদি ঠিক ঠিক নিয়ম মেনে এই মন্ত্রটি যপ করা যায়, তাহলে দেহের অন্দরে দৈবিক শক্তি এতটাই বেড়ে যায় যে মৃত্যু ধারে কাছেও ঘেঁষতে ভয় পায়। প্রসঙ্গত, অনেক বইতে এই মন্ত্রকে রুদ্র মন্ত্র নামেও ডাকা হয়ে থাকে।।রুদ্র কথার অর্থ হল তেজ বা শক্তি, যা শরীরকে ভিতরে এত পরিমাণে শক্তির প্রবেশ ঘটায় যে রোগ বেড়ে ওঠার সুযোগই পায় না। অনেকে মনে করেন দেবাদিদেব শিবের তেজর কথা মাথায় রেখেই বহু মুনি-ঋষিরা এই নামে ডেকে থাকেন এই বিশেষ মন্ত্রটিকে।

অনেকের কাছে ত্রিয়াম্বাকাম নামেও পরিচিত এই মন্ত্রটি। ত্রিয়াম্বকম কথার অর্থ হল মাহাদেবেপ শিবের তিন নয়ন। এখানেই শেষ নয়, মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রকে অনেকে "মৃত্যু সঞ্জীবনী মন্ত্র" নামেও চিনে থাকেন। বেদে এই মন্ত্রিটি সংস্কৃততে লেখা রয়েছে। 

মন্ত্রটি হল- 
"ওম। ত্রম্বকাম যজমাহে, 
সুগন্ধিম পুষ্টি-বর্ধানাম, 
উরুভারুকম্ভিয়া বান্ধানাম, 
মৃত্যুয়র মুখশিয়া মামরিতাত।" 

প্রসঙ্গত, চার লাইনে ভাঙা এই মন্ত্রটির প্রতিটি লাইনে আটটা চিহ্ন রয়েছে, যা উচ্চারণ করার সময় সারা শরীরজুড়ে একটা কম্পন ছড়িয়ে পরে। এই কম্পনই শরীরে ভেতরে থাকা হাজারো ক্ষতকে নিমেষে সারিয়ে তোলে। শুধু তাই নয়, ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে এই মন্ত্রটি। আধুনিক কালে এই মন্ত্রটিকে নিয়ে একাধিক গবেষণা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে মন্ত্রটি পাঠ করার সময় মস্তিষ্কের অন্দরে থাকা নিউরনগুলি এতটাই অ্যাক্টিভ হয়ে যায় যে ধীরে ধীরে মনোযোগ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তিরও উন্নতি ঘটে।

শিবের মহামন্ত্র টি পাঠ করলে কি কি উপকার হয়?
মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র,অমৃত মন্ত্র,মৃত্যুজয়ের মন্ত্র,আয়ু বৃদ্ধির মন্ত্র,দীর্ঘায়ু মন্ত্র,শিব প্রদত্ত মহামন্ত্র,শিবের বর মন্ত্র, যে মন্ত্র পাঠ করলে দীর্ঘায়ু লাভ হয়
মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র (যা মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র বা ত্র্যম্বকম মন্ত্র নামেও পরিচিত) হল হিন্দুধর্মের একটি পবিত্র ও শক্তিশালী মন্ত্র, যা ঋগ্বেদে উল্লেখিত এবং ভগবান শিবের স্তুতিতে রচিত। এই মন্ত্রটি পাঠের মাধ্যমে ভক্তরা দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য, আধ্যাত্মিক শক্তি ও মৃত্যুঞ্জয়ী শক্তি লাভ করেন।

মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠের উপকারিতা:
১. দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য লাভ: এই মন্ত্রটি রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি দেয় এবং দীর্ঘজীবন দান করে।
২. মৃত্যুভয় দূরীকরণ: মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের শক্তিতে অকালমৃত্যুর ভয় দূর হয়।
৩. শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি: এটি শরীর ও মনের রোগ দূর করে শক্তি ও প্রাণশক্তি বাড়ায়।
৪. আধ্যাত্মিক উন্নতি: মন্ত্রজপে মন শুদ্ধ হয়, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ হয়।
৫. নেতিবাচক শক্তি থেকে রক্ষা: এটি কালো জাদু, অপশক্তি ও দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে।
৬. কর্মফলের উন্নতি: এই মন্ত্র পাঠে জীবনের বাধা-বিপত্তি দূর হয়ে সাফল্য আসে।
৭. পিতৃদোষ ও গ্রহদোষ প্রশমন: জ্যোতিষশাস্ত্রে বলা হয়, এই মন্ত্র গ্রহপীড়া ও পিতৃদোষ কমাতে সাহায্য করে।

মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র কীভাবে জপ করবেন?
প্রতিদিন ১০৮ বার জপ করতে পারেন (রুদ্রাক্ষ মালা ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়)।

প্রভাত বা সন্ধ্যায় শিবলিঙ্গের সামনে বা পবিত্র স্থানে বসে জপ করুন।

শুভ সময়: বিশেষত সোমবার, মহাশিবরাত্রি বা প্রদোষ কালে জপ করলে বেশি ফল পাওয়া যায়।

এই মন্ত্রের শক্তি অপরিসীম, নিষ্ঠা ও বিশ্বাসের সাথে পাঠ করলে জীবনে সুখ, শান্তি ও মোক্ষ লাভ সম্ভব।

মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের ব্যাখ্যা:
মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র সংস্কৃত ভাষায় একটি প্রাচীন ও শক্তিশালী বৈদিক মন্ত্র। একে রুদ্র মন্ত্র বা ত্র্যম্বকম মন্ত্র-ও বলা হয়। এটি ঋগ্বেদ ও যজুর্বেদে পাওয়া যায় এবং মূলত ভগবান শিব-কে উদ্দেশ করে উচ্চারণ করা হয়।

মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র:
ॐ त्र्यम्बकं यजामहे सुगन्धिं पुष्टिवर्धनम्।
उर्वारुकमिव बन्धनान् मृत्योर्मुक्षीय माऽमृतात्॥

বাংলা উচ্চারণ:
"ওঁ ত্র্যম্বকং ইয়জামহে সুগন্ধিং পুষ্টি বর্ধনম্।
উর্বরুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যোর্মোক্ষীয় মাঽমৃতাৎ॥"

শব্দার্থ ও ব্যাখ্যা:
ॐ (ওঁ): পরম ব্রহ্ম, সৃষ্টির মৌল শব্দ।

त्र्यम्बकं (ত্র্যম্বকম্): তিন-চোখবিশিষ্ট, অর্থাৎ ভগবান শিব।

यजामहे (ইয়জামহে): আমরা পূজা করি বা আহ্বান করি।

सुगन्धिं (সুগন্ধিং): পবিত্র সুবাসযুক্ত, যার গুণধর্ম শুভ ও আকর্ষণীয়।

पुष्टिवर्धनम् (পুষ্টি বর্ধনম্): যিনি পুষ্টি ও উন্নতি প্রদান করেন।

उर्वारुकम् (উর্বরুকম্): পাকা ফল বা শশা (যা ডাঁটা থেকে সহজে আলাদা হয়)।

इव (ইব): যেমন বা মতো।

बन्धनान् (বন্ধনান্): বন্ধন বা বন্ধনসমূহ।

मृत्योः (মৃত্যোঃ): মৃত্যুর থেকে।

मुक्षीय (মোক্ষীয়): মুক্ত করো বা মুক্তি দাও।

मा अमृतात् (মা অমৃতাত্): অমৃত থেকে নয় (অর্থাৎ অমরত্ব বা মুক্ত আত্মা থেকে আমাকে আলাদা কোরো না)।

মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র বাংলা অনুবাদ ঃ
মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র সারাংশ:
এই মন্ত্রে প্রার্থনা করা হয় যেন ভগবান শিব আমাদের দেহ, মন ও আত্মার রোগ-শোক, কষ্ট ও মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত করেন — যেমন পরিপক্ব ফল গাছ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঝরে পড়ে।
এছাড়াও, তিনি যেন আমাদের অমৃতের পথ থেকে বিচ্যুত না করেন, বরং আধ্যাত্মিক মুক্তি ও শান্তির পথ দেখান।

মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপের উপকারিতা:
রোগ মুক্তি ও দীর্ঘায়ুর জন্য জপ করা হয়।
মানসিক শান্তি ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
মৃত্যুভয় কাটায়।
শারীরিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি প্রদান করে।
গুরুতর অসুস্থতা বা সংকটের সময় এই মন্ত্র শক্তিশালী প্রতিরক্ষা রূপে কাজ করে।

পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই আসুন আমরা সকলে প্রত্যেকদিন একবার হলেও এই মহামন্ত্রটি জব করি এবং দেবাদিদের আদি দেব মহাদেবের অনুকূলে নিজের জীবনকে স্বল্পিত করি।

Comments