হিন্দু ধর্মে নারীর পোশাক সম্পর্কে শাস্ত্রে কি বলা হয়েছে
হিন্দু ধর্মে নারীর পোশাক সম্পর্কে তেমন কোন নির্দিষ্ট নিয়ম না থাকলেও সাধারণ কিছু নিয়ম রয়েছে যেগুলো একজন নারীর জন্য অত্যাবশ্যক আসুন আমরা জেনে নেই সে সম্পর্কে। হিন্দু ধর্মে নারীদের পোশাক পরম্পরা সম্পর্কে প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় যুগের তথ্য অনেকের মতে অস্পষ্ট তবে বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী অনেকটাই স্পষ্ট ।বেদ গ্রন্থ ছাড়াও প্রাচীন ভারতীয় গ্রন্থে সাধারণত নারীদের বস্ত্রের উল্লেখ আছে। যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,অর্থশাস্ত্রে পোশাক এবং উদ্ভিদ-ভিত্তিক, মসলিন-ভিত্তিক, উল-ভিত্তিক বস্ত্রের আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে রঞ্জিত, বোনা উল্লেখ করা হয়েছে। নারী বা পুরুষের পোশাক পরিধান সম্পর্কে সনাতন ধর্মের পবিত্র সংবিধান বেদের আলোকে তা উপস্থাপন করছি…
হিন্দু ধর্মে নারীর পোশাক সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট ও বাধ্যতামূলক নিয়ম নেই, যেমনটা অনেক ধর্মে দেখা যায়। তবে হিন্দু সমাজে এবং সংস্কৃতিতে কিছু ঐতিহ্যবাহী ও সাংস্কৃতিক পোশাকের ধরণ গড়ে উঠেছে, যা সময়, অঞ্চল ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে ভিন্ন হতে পারে।
![]() |
হিন্দু ধর্মে নারীর পোশাক |
ধর্মমতে শালীনতা আসলে শুধুমাত্র পোশাকে সীমাবদ্ধ থাকার বিষয় নয় তৎসংজ্ঞে চিন্তায়,আচরনে, সর্বক্ষেত্রে বিনম্রতা বজায় রাখা ই ধর্মের শালীনতা।
প্রশ্ন থেকে যায় আর পোশাকর শালীনতায় কেন শুধু নারীদের প্রতি ই উপদেশ দেয়া হবে?নাকি পুরুষদের ক্ষেত্রে সমান?
পুরুষ ও নারী উভয়ের ই দায়িত্ব পোশাকের শালীনতা বজায় রাখার।
মানবতার ও যৌক্তিকতার প্রতিমূর্তি হলো পবিত্র বেদ ও গীতা। এটি কোন নির্দিষ্ট অযৌক্তিক নিয়ম কানুন,পোশাক -পরিচ্ছদ নরকের আগুনের ভয় দেখিয়ে মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয় না
👉**অধঃ পশ্যস্ব মোপরি সন্তরাং পাদকৌ হর।
মা তে কশপ্লকৌ দৃষান্তস্ত্রী হি ব্রহ্মা বভুবিথ।।
ঋগ্বেদ ৮.৩৩.১৯
👏বাঙলা অনুবাদ: হে নারী ও পুরুষ তোমাদের দৃষ্টি সবসময় হোক ভদ্র ও অবনতোর দিকে।নারী পুরুষের চলন হোক সংযত, দেহ হোক পোষাকে আবৃত,নগ্নতা হোক পরিত্যাজ্য।
পবিত্র বেদ এর উপদেশ সমুহ নগ্নতা, অশ্লীল কথা না বলা, শোনা বা দেখা নিয়ে নানা ভাবেই বোঝানো হয়েছে।
👉**ওঁ ভদ্রং, কর্ণেভি শৃনুয়াম, দেবা ভদ্রং পশ্যেমাক্ষ ভির্যজত্রাঃ।
স্থিরৈরঙ্গৈস্তুস্টুবাংসস্তনুভির্ব্যশেম দেবহিতং যদায়ু।।
ঋগ্বেদ ১.৮৯.৮
👏বাংলা অর্থ -আমরা যেন তোমার ভজন করি হে ঈশ্বর, কান দিয়ে মঙ্গলময় কথাবার্তা শুনি ও শ্লীল , চোখ দিয়ে শ্লীল ও মঙ্গলময় দৃশ্য দেখি। তোমার আরাধনাতে যে আয়ুস্কাল ও সুদৃঢ় দেহ প্রয়োজন তা যেন আমরা প্রাপ্ত হই।
শালীনতা হোক বাক্যে, কর্মে, চিন্তায় শুধুমাত্র তা শালীনতা শুধু পোশাকের আলোচনায় সীমাবদ্ধ না থাকে যেন।
পোশাক সম্পর্কে সনাতন/ হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের জন্য সংক্ষেপে বেদ থেকো মন্তব্য তুলে ধরছি--
না, নারীদের পর্দা করার বিষয়ে হিন্দু ধর্ম (শ্রুতি) কিছুই বলে না। বেদে শালীন পরিচ্ছদ পরতে বলা হয়েছে।গৃহদ্বারা নয়, পোশাক নয়, কোনোপ্রকার আবদ্ধ দেয়ালে লোকচক্ষু থেকে আবৃত থাকা নয়, নয় কোন রাজ আভিজাত্য, চরিত্রই একজন নারীর প্রকৃত আবরণ।
তাই ঋগ্বেদ ৮.৩৩.১৯ অনুচ্ছেদের অংশটি প্রমাণ করে সনাতন ধর্মের নারী ও পুরুষের পোশাক পরিচ্ছদ সম্পর্কে কতটা গুরুত্বপূর্ণ বহন করে থাকে হিন্দুধর্ম । হরে কৃষ্ণ।
লেখাটি সারাবিশ্বে শেয়ার করে দিন যাতে অন্য ধর্ম্বালম্বীরা বুঝতে পারে আমাদের সনাতন ধর্ম নারীদের পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে কতটা রুচিশীল তথ্য দিয়েছ। একই সঙ্গে নারীদের কতটা সম্মানে সম্মানিত করেছে।
ঐতিহ্যবাহী নারীর পোশাক:
সারি (Saree) – এটি ভারতের, বাংলাদেশের, নেপালের এবং শ্রীলঙ্কার হিন্দু নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। এটি প্রায় ৫ থেকে ৯ গজ লম্বা কাপড়, যা বিভিন্নভাবে পরা হয়।
সালওয়ার কামিজ / লেহেঙ্গা চোলি – উত্তর ভারতীয় এবং কিছু দক্ষিণ ভারতীয় অঞ্চলে বেশি প্রচলিত।
শাল/ওড়না – সাধারণত বয়স্ক বা রক্ষণশীল নারীরা মাথা ঢাকার জন্য ব্যবহার করেন, বিশেষত মন্দিরে বা পূজার সময়।
বিনোদন বা আনুষ্ঠানিক পোশাক – বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা পূজায় সাধারণত উজ্জ্বল রঙের, সিল্ক বা জমকালো কাপড়ের পোশাক পরা হয়।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে:
হিন্দু ধর্মে শালীনতা (modesty) ও সৌন্দর্য প্রকাশের ভারসাম্য বজায় রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়।
নারীদের পূজায় বা মন্দিরে প্রবেশের সময় পরিষ্কার, শালীন ও সাধারণত ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরার প্রথা রয়েছে।
অনেক জায়গায় মনে করা হয়, সাদা পোশাক বিধবাদের জন্য, আবার লাল বা হলুদ শুভ রঙ হিসেবে বিবেচিত।
আঞ্চলিক ভিন্নতা:
পশ্চিমবঙ্গে নারীরা সাধারণত শাড়ি পরে, বিশেষ করে "লাল পাড় সাদা শাড়ি" পূজার সময় বেশি জনপ্রিয়।
দক্ষিণ ভারতে নারীরা অনেক সময় "পবড়াই থাভানি" বা "হাফ সাড়ি" পরে ছোটবেলায়, পরে পূর্ণ শাড়ি।
রাজস্থান বা গুজরাটে "ঘাঘরা চোলি" প্রচলিত।
সনাতন ধর্মে, বিশেষ করে বেদে নারীর পোশাক সম্পর্কে সরাসরি খুব স্পষ্ট বা বিস্তারিত নির্দেশনা নেই। তবে কিছু সাধারণ নীতিমালা, আচার ও সমাজিক রীতি রয়েছে, যা থেকে নারীর পোশাক সম্পর্কিত ধারণা পাওয়া যায়।
১. বেদে সরাসরি উল্লেখ:
বেদ — ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ — মূলত ধর্মীয় আচার, মন্ত্র, যজ্ঞ ও দার্শনিক ধারণা নিয়ে গঠিত। এগুলোতে নারীর পোশাক নিয়ে বিস্তারিত বিধান নেই। তবে ভদ্রতা, শালীনতা, এবং যথাযথ আচরণ নিয়ে যে নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে, তা পোশাক সম্পর্কেও কিছুটা ইঙ্গিত দেয়।
২. সমাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট:
প্রাচীন ভারতে নারীরা সারী বা ধরণের চাদর (অন্তরবাস ও উত্তরবাস) পরে থাকতেন।
সাধারণত শরীর আবৃত রাখা, শালীনতা বজায় রাখা, ও সম্মানজনক পোশাক পরাই ছিল রীতি।
বৈদিক যুগে নারীকে জ্ঞানী, স্বাধীন ও পূজার অধিকারসম্পন্ন হিসেবে বিবেচনা করা হতো, তাই পোশাকেও একধরনের মর্যাদা বজায় থাকত।
৩. ধর্মীয় দর্শনের দৃষ্টিভঙ্গি:
সনাতন ধর্মের মূল দর্শন হলো –
"বাহ্য রূপ নয়, আত্মা-ই সত্য।"
এই দৃষ্টিভঙ্গিতে, পোশাক গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেটা শালীনতা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ অনুযায়ী বিবেচিত হয়।
৪. মনুস্মৃতি ও অন্যান্য গ্রন্থে (যা অনেক পরের):
মনুস্মৃতি বা ধর্মশাস্ত্রগুলোতে নারীর আচরণ, পোশাক, চলাফেরা ইত্যাদি নিয়ে অনেক বিধান রয়েছে, তবে এগুলো বেদের পরবর্তী সময়ের সামাজিক নীতিমালা। সব হিন্দু এ গ্রন্থগুলোকে সমানভাবে মানেন না।
উপসংহার: আসুন আমরা সকলে ধর্মীয় মত অনুসারে আমাদের মা-বোনদের পোশাক পরিধানে উৎসাহিত করি আর নগ্ন টাকে ঘৃণা করি।.
Comments
Post a Comment